আড়াইহাজার এমপি বাবুর ঢাকার বাসায় তালা।
আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর সহধর্মীনি ডা. সায়মা আফরোজ ইভা বলেছেন, ‘আমার জন্ম পলিটিক্যাল ফ্যামিলিতে। পরবর্তিতে সংসার করছি পলিটিক্যাল একজন মানুষের সঙ্গে। এই মুহূর্তে জোর গলায় কিছু বলতে পারছি না। সেটা ভবিষ্যৎ বলে দিবে যে কি করব কি করব না। তবে আপাতত আমার ইচ্ছে নেই। আপাতত আমার ডাক্তারি পেশা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি। এটাতেই আমার ইচ্ছা। রক্তে যেহেতু রাজনীতি আছে। নৌকায় আসতেও পারি। সময়ের ব্যাপার।’
৯ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জের লাইভ টকশো ‘করোনায় ঘরে বাইরে ও নারীদের ভূমিকা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এসময় অতিথি হিসেবে আরো যুক্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপি।
ডা. সায়মা বলেন, ‘একটি মেয়ে তাঁর বাবার বাড়িতে যতটাই রাজকন্যা থাকুকনা কেন পরবর্তিতে যদি স্বামীর সাপোর্ট না পায় তখন কিন্তু আর তাঁর মাঝে যতই প্রতিভা থাকুক সে কিন্তু বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমার মনে হয় লিপি ভাবীর মত আমিও অনেক ভাগ্যবতী। আমাদেরকে ফ্রন্টলাইনে আনার জন্য তাঁদেরও অনেক হাত রয়েছে। তাঁদের উৎসাহের কারণে আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি।’
ইভা বলেন, ‘আমার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে আমি একজন সাংসদের স্ত্রী। তিনি আমাকে যথেষ্ট সহযোগীতা করছেন। নিজের থেকে বললে হয়তো মনে হবে নিজের ঘরের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছি। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। সহযোগীতা পেয়েছি তাই বলছি। উনি আমাদেরকে অনেকটা সহযোগীতা করেছেন। সবার সমন্বয়েই সম্ভব হয়েছে আড়াইহাজারবাসীকে স্বাস্থ্য সেবা ভালোভাবে দেওয়ার। এবং আমরা এটা করে যাচ্ছি এবং সামনের দিনগুলোতেও করব।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী এবং আমি মার্চ মাসের শুরু থেকেই আড়াইহাজারে আছি। আমার মনে হচ্ছিল যে আমি যদি ঢাকা থেকে এসে অফিস করতে পারতাম। কিন্তু এমপি সাহেব তো যাবেন না। ওনার জনগনকে ছাড়া ওনি ভালো থাকবেন না। ওনাকে সুস্থ রাখতে হলে ওনাকে আড়াইহাজারে থাকতে হবে। ওনি এক জায়গায় থাকবেন আমি এক জায়গায় থাকবো সেটা তো হচ্ছে না। এ জন্য আমিও ঢাকার বাসা তালা দিয়ে আড়াইহাজারে চলে এসেছি। এখনো আছি। আমার ছেলের মাঝেও ভয় নেই স্বামীর মাঝেও ভয় নেই।’
ইভা আরো বলেন, ‘সব কিছুর পরে আমরা মানুষ। বিবেকের তাড়নায় করোনার মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি মনে করি সব কিছুর উপরে হচ্ছে নিজের বিবেক। যখনি আমি আমার পেশায় যাচ্ছি সেখানে যেমন আমার বিবেক কাজ করছে। তেমনি মানুষ হিসেবেও আমি যখন দেখছি একজন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তখন ওই রোগীর কাছে ডাক্তাররা অনেক বড় একটি স্থান নিয়ে নেয়। তাঁদের কাছে মনে হয় যে ডাক্তার হচ্ছে আশা ভরসার জায়গা। আমরা সেই জায়গা থেকেই চেষ্টা করি যে এই রোগী আমার আত্মীয় স্বজন হতে পারতো। ওদেরকে যখন দেখি তখন আমার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার সঙ্গে যারা সহকর্মী আছেন তাঁরাও এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। এই বিষয়ে আমাদের মাঝে কোনো কৃপণতা নেই। মাঝ রাতে কেউ আসলেও কেউ বিরক্ত হচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একটি কথা মনে হয়েছে যে, ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।’ আপনি যদি একটি জিনিসকে ভয় পেয়ে জান তাহলে হবে না। করোনাকে সাথে নিয়েই আমাদেরকে বসবাস করতে হবে। এটা মোটামুটি সবার মাইন্ড সেটাপ হয়ে যাচ্ছে যে করোনার সহজে যাচ্ছে না। করোনার সাথেই আমাদেরকে চলমান জীবন। তো এই মুহূর্তে যদি আমি ভয় পেয়ে বাসায় বসে থাকি তাহলে তো হবে না। আমি বরাবরই পজিটিভ চিন্তার মানুষ। মনে হয় যে রোগ হলে হবে। অন্য সব সময় তো রোগ হয়। এটাতে ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি আমার কাজটি করে যাই। যদি আল্লাহ আমাকে এই রোগে আক্রান্ত করেন করবেন। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি ভয় পেয়ে যাই। সেই ভয়েই যদি ঘরে বসে থাকি তাহলে হবে না।’
ইভা বলেন, ‘এই দুর্যোগকালে অনেকেই দেখা যাচ্ছে করোনা রোগীকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে দেখছে। এটা করা ঠিক না। রোগী মানে শুধুই রোগী। এটা যে কেউ হতে পারে। আজকে আমি সুস্থ আছি। কালকে আমি সুস্থ নাও থাকতে পারি। আমিও করোনায় আক্রান্ত হতে পারি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে মানুষের মাঝে এমন একটি বিষয় কাজ করছে যে যখনি কেউ শুনছে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তখন অন্যভাবে দেখা শুরু করছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদেরকেও বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। বলছে যে আপনি করোনায় আক্রান্ত আপনি এই বাসায় থাকতে পারবেন না। এই বিষয়টি যে কতটা দুঃখজনক।’