লক্ষ্মীপুরের সন্ত্রাসীদের মহড়া ফের নৈরাজ্যের আশঙ্কা
লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জত এলাকায় আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। বন্দুকযুদ্ধে নিহত জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের বেশ কয়েকজন সদস্য রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রকাশ্য তৎপরতা ও স্বশস্ত্র মহড়ায় এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, বিরোধীদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এসব সন্ত্রাসীরা নৈরাজ্যের মাধ্যমে দলীয় প্রতিপক্ষ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘায়েল ও চন্দ্রগঞ্জে আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, এসব সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছেন জিসানের সহকারি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন পলাশসহ দেশের বাহিরে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসী। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, চন্দ্রগঞ্জে বিরোধী দলের কোন্দল দীর্ঘদিনের। একটি পক্ষে চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও আরেকটি পক্ষ চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ কালা মুন্সি। জিসান জীবিত থাকাকালে তার গ্রুপে ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা তোফায়েল আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ কালামুন্সি, আলী করিম মেম্বার।
অপরদিকে স্থানীয় নাসির ডাকাতের পক্ষে ছিলেন বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, অকাল প্রয়াত মাইন উদ্দিন হামিম ও জিসান বাহিনীর গুলিতে নিহত সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মহসিন।
সন্ত্রাসী জিসান ও নাসির ডাকাত জীবিত থাকা অবস্থায় চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় প্রতিদিন বন্দুকযুদ্ধ, খুন, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ছিল নিত্য ঘটনা। একাধিকবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জিসান ও নাসিরের মৃত্যু হলে এই এলাকায় শান্তি ফিরে আসে। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অধরা থেকে যায়। জিসানের মৃত্যুর পর তার বাহিনীর কিছু সন্ত্রাসী গা ঢাকা দেয় এবং কয়েকজন দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশ পালিয়ে যায়।
বর্তমানে চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল ও সরকার পতনের আন্দোলনে প্রকাশ্যে আসে জিসান বাহিনীর দূধর্ষ সন্ত্রাসীরা। গত ৪ মাসে একাধিকবার এসব সন্ত্রাসীদের বাজারে তৎপরতা, এলাকায় স্বশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা গেছে। আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও কালামুন্সি উভয়পক্ষের গ্রুফেই দেখা গেছে দুধর্ষ সন্ত্রাসীদের। চন্দ্রগঞ্জের এসব সন্ত্রাসীদের বিভিন্নভাবে শেল্টার দিচ্ছেন জিসানের সহকারি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনোয়ার হোসেন পলাশসহ বেশ কয়েকজন। মধ্যপ্রাচ্য ও নিউইর্য়কে জিসান স্মৃতি পরিষদ নামে সংগঠন তৈরী করে জিসানের অনুসারীদের জন্য ফান্ড গঠন করা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন পলাশ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব তোফায়েল আহমেদর ছেলে। সন্ত্রাসী অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
জিসান জীবিত থাকাকালে পলাশকে চাঁদাবাজীর অর্ধ কোটি টাকা খরচে অবৈধপথে যুক্তরাষ্ট্র যেতে সহযোগিতা করেন। তোফায়েলের আরেক ছেলে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফরহাদ হোসেনও অবৈধপথে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে। সেও মহসিনসহ ৩টি হত্যা ওপুলিশের উপর হামলাসহ অন্তত ১৫টি মামলার পলাতক আসামী। জিসান বাহিনীর অন্তত ৩০ জন দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। এরা বিদেশ থেকে দেশ ও সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। সরকারি বিরোধী অপপ্রচারে ব্যবহার করছেন সোশ্যাল মিডিয়া। বর্তমানে প্রবাসে আত্মগোপনে থাকা এদের মদদে এলাকায় থাকা সন্ত্রাসীরা আবারও মারমুখি অবস্থানে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ার হোসেন পলাশ গত মে মাস থেকে ঢাকায় শশুরের বাসায় অবস্থান করছেন। একাধিক মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকায় দেশে এসে আত্মগোপনে রয়েছেন। বর্তমানেও দেশে অবস্থান করছেন। চন্দ্রগঞ্জের একাধিক সন্ত্রাসী তার সঙ্গে গোপন বৈঠকেও মিলিত হন। আনোয়ার হোসেন বাচ্চুকে ঘায়েল করতে রয়েছে তার গোপন মিশন। এরআগেও দলীয় কোন্দলে এই গ্রুফটি আনোয়ার হোসেন বাচ্চুকে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে হত্যার চেষ্টা করে। ওই সময় স্থানীয়রা অস্ত্রসহ জিসান বাহিনীর এক সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে দেয়। চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু বলেন,একসময় চন্দ্র গঞ্জ ছিল সন্ত্রাসের ভয়াল জনপদ। আমার বাড়িঘর অগ্নিসংযোগ সহ আমার স্কুল পড়ুয়া ভাগিনাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। আবারো তারা সংগঠিত হয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছাবির আহমেদ বলেন, চন্দ্রগঞ্জ কে প্রশাসনের একান্ত প্রচেষ্ঠায় সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত করা হয়। আবারো সন্ত্রাসীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। মানুষ শান্তি চায়। জনগণের শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সাথে নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় তা রুখে দেয়া হবে। চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম মজুমদার জানান, আওয়ামী লীগ করার কারণে আমার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, বর্তমনেও চন্দ্রগঞ্জে গ্রুফিং চরমে। কিছু সন্ত্রাসী নিহত হলেও বাকীরা কেউ বিদেশে পলাতক, কেউ জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারো সংগঠিত হয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগেরই কিছু লোক আবার তলে তলে এদের শেল্টার দিচ্ছে।
চন্দ্র গঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন জানান, চন্দ্রগঞ্জে একসময় অস্থিতিশীল থাকলেও এখন শান্ত অবস্থায় আছে। তবে এখন বিরোধী দলের ফাঁকা মাঠে আওয়ামীলীগে গ্রুফিং তৈরী হয়েছে। তারাই এখন মহড়া দিচ্ছে। বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অপরদিকে তোফায়েল আহমেদ জানান, আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে থাকা অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। আর দুই একটা মামলা আছে তাও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি বলেন, কোন ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির কেউ চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান পরিস্কার।