জাতীয়

জনগণের আস্থা অর্জনের পথে ইসি

মেহেদি হাসান হাসিব, নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন শপথ গ্রহণের পর জনগণের আস্থা অর্জনে প্রথম পরীক্ষা হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কুসিক নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ করতে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি স্থাপন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আগামী ১৫ জুন কুসিকসহ ৬ পৌরসভা ও ১৩৫ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেখানে অনিয়ম দেখা গেছে সেখানেই ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনের অমান্য করলে বাদ দেওয়া হচ্ছে না সরকারি দলের প্রার্থীদেরকেও। তবে কি জনগণের আস্থা অর্জন করতে ইসির এমন পদক্ষেপ? অনেকের মনে এমন প্রশ্ন।

ইসি বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যতদিন এই কঠোর অবস্থান রাখা দরকার ততদিনই রাখবো। ভোট দেওয়ার পরিবেশ যেটা নষ্ট হয়ে গেছে সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ নির্বাচন করতে চাই। ভোটাররা নির্ভয়েভোটদিতে পারবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জাতীয় নির্বাচনে যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, সেটাই আমরা চাই। আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে আমরা ছাড়বো না। কোনো রকম পিছপা হবো না। বরদাস্ত করবো না। ১৫ জুন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আব্দুল খালেক ও তার সমর্থকরা মিছিল-শোভাযাত্রা করে ১৮ মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জনাব মো. কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে। যা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার (২ জুন) ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে ঝিনাইদহ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল খালেকের প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

একই দিনে যথাযথ আচরণবিধি পালনে দেশের দুই জেলার তিন সংসদ সদস্যকে সাবধান করে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা হলেন) শরীয়তপুর-১ আসনের মো. ইকবাল হোসেন, ঝিনাইদহ-১ আসনের মো. আব্দুল হাই ও ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী। তাদের আচরণবিধি প্রতিপালনে সাবধান হতে বলেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরে তিনজনকে ওই চিঠি পাঠানো হয়।

গত রোববার (৫ জুন) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই নির্দেশনা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান।

১৫ জুন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী ঘোষণা দেন যে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের বাটন টিপতে না পারলে টিপে দেওয়ার জন্য নিজের লোক রাখবেন এবং ইভিএমকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে বিজয় ছিনিয়ে আনার হুমকি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ইভিএম না থাকলে রাতেই সব ভোট নিয়ে ফেলতেন এমন বক্তব্য বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যায় এবং পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্তে প্রমাণিত হয়। এই কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এবং দন্ডবিধি অনুযায়ী অপরাধ। এই প্রেক্ষাপটে চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী-এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরর (জি.আর. মামলা) জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।

এই অবস্থায় ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে এজাহার দায়ের ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। প্রার্থীতা বাতিল কেন করা হলো না এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের ইসি রাশেদা বলেন, ইউপিতে আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থীতা বাতিলের কোনো এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। যার কারণে আমরা ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সিটি কিংবা পৌর নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী তার বিরুদ্ধে রায় হলে তখন শাস্তি হলে প্রার্থী হতে পারবে না। ওই সময় যেটা হবে, সেভাবে সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি বলেন, রিকশাওয়ালার কথাও আমরা আমলে নিচ্ছি। একজন রিকাশাওয়ালা দেশের নাগরিক তারা যখন বলছে আমরা ইভিএমে ভোট দিতে পারি না, প্রতিটা পত্রিকায় বলছে। এজন্যই আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাচ্ছি। এজন্যই বিশেষজ্ঞদের এনে দেখালাম। আমরা খতিয়ে দেখিয়ে চাই যে বাজারে যে কথা আছে তা কি রিউমার? নাকি আসলেই আছে।

ইসি বলেন, এই প্রথম আমরা সামাজিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। আমার মনে হয় না এর আগে কোন কমিশন তা করেছে।ইসির যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামানকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি সরাসরি আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্যারের কাছে রিপোর্ট করবেন। এই কমিশনার আরও বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা কথাই বারবার শুনে আসছি, ভোটারদের আস্থা নেই নির্বাচন কমিশনের ওপর। যদি ভোটারদের ভোটের ওপর আস্থা না থাকে তা হলে ভোট হবে কী করে? ভোটারবিহীন ভোট কোনো ভোটই নয়। ভোটাররা যাতে নির্বিঘে ভোট দিতে আসতে পারেন আমরা সে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। ভোটারদের আস্থা অর্জনে সবকিছু করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button