জাতীয়

চরে চরে বসেছে ইলিশের হাট

মা-ইলিশ সংরক্ষণ ও প্রজনন নিশ্চিত করতে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ে ইলিশ ধরা ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এর মধ্যেও পুলিশ ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে ইলিশ শিকার। হাটবাজারে বিক্রি করতে না পারায় পদ্মার তীরে নৌকায় বা চরের কাশবনের মধ্যে বসছে বাজার। মানুষও কম দামে কিনছে সেই ইলিশ।

পদ্মার বিভিন্ন চরে ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে বাকি আছে এখনো ৪ দিন। কিন্তু নদীতে বেশ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করলেও আটকে রাখা যাচ্ছে না জেলেদের। তাঁরা নৌকা আর জাল নিয়ে নেমে পড়ছেন ইলিশ ধরতে।

নদী ও চরগুলোয় স্থায়ীভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্প না থাকায় মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুর অংশের পদ্মা নদী ও চরগুলোয় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মা-ইলিশসহ ছোট-বড় ইলিশ। কাশবনের ফাঁকে অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে চলছে ইলিশ কেনাবেচা। অনেক সময় মাছ নদীর চরে রেখেই মুঠোফোনের মাধ্যমে নদীপারের প্রত্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা নানা উপায়ে পৌঁছাচ্ছেন প্রত্যন্ত এসব এলাকায়।

মাঝি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের শিবচরের প্রশাসন অনেক কড়াকড়ি থাকলেও মুন্সিগঞ্জসহ অন্য অঞ্চলে প্রশাসন ততটা কড়াকড়ি করে না। ওই সব অঞ্চলে গিয়ে মাছ ধরে চরেই বিক্রি করি। শহরের কোনো হাটবাজারে যাই না। চরের মধ্যেই অনেক ক্রেতা আসেন, আমরাও তাঁদের একটু কম দামে মাছ দিয়ে দিই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘শুনছিলাম পদ্মার মারধরের তারাকান্দি এলাকায় কম দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ট্রলারে ভেঙে ভেঙে এই চরে এসে কিছু মাছ কিনলাম। প্রশাসনের ভয় আছে, তবুও কিনলাম।’
মা-ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে দিনে দুবার টহল দেয় জানিয়ে চরজানাজাতের বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, নদীতে টহল দিলেও পাড়ে কেউ আসে না। চরগুলোয় অস্থায়ী বাজার বসিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইলিশের হাট বসে।

জানতে চাইলে শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দফায় দফায় পদ্মায় অভিযান চালাচ্ছি। জেলেদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। নদী ও চরগুলোয় স্থায়ীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন। তা না হলে সুযোগ বুঝে অসাধু মাছশিকারিরা ইলিশ নিধন করবেই।’

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমতী ও পটিয়া গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় জেলেরা অবাধে ধরছেন মা-ইলিশ। আর এসব ইলিশ নদী থেকেই পাইকারেরা পানির দরে কিনে নিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছেন সস্তায়। এ ছাড়াও মেঘনা নদীতে সস্তায় ডিমওয়ালা ইলিশ বিক্রির খবর শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নদীর ঘাটে গিয়ে পাইকারদের কাছ থেকে ইলিশ কিনছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গল গ্রামের এক গৃহবধূ জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ৬৪টি ইলিশ কিনেছেন দুই হাজার টাকায়। কেনার পরপরই জায়গায় বসে মাছগুলো কাটিয়ে নিয়েছেন যাতে প্রশাসনের লোকজন ধরতে না পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button