বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তবে এটি সঠিক সংখ্যা নয় বলছে বিবিসির একটি গবেষণা। বিবিসি বলছে, অন্তত আরও ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছেন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে, মৃতের তালিকা থেকে যা বাদ পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ নানা কারণে এসব মানুষের নাম লিপিবদ্ধ হয়নি।
এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশে করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত হিসাব তুলনা করা কঠিন ব্যাপার। কতো মানুষের পরীক্ষা করা হলো, হাসপাতালে কত মানুষের মৃত্যু ঘটল, হাসপাতালের বাইরে কতজন মানুষ মারা গেল-এসব তথ্যের স্বচ্ছতার ওপরে প্রকৃত হিসাব যাচাই-বাছাই করা সম্ভব। তবে অন্তত ২৭টি দেশের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এ মহামারিতে সেসব দেশে মৃত্যুর সংখ্যা এবং হার বেশি।
বিশ্বব্যাপী নানা দেশের সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তার চেয়ে আসল মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যে অন্য বছরের তুলনায় একই সময়ে ৪৩ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছে। ৬৪ হাজার ৫০০ মানুষ বেশি মারা গেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। ওয়েস্ট মিডল্যান্ড, নর্থ ওয়েস্টসহ অনেক এলাকায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সরকারি হিসাবে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজারের কিছু বেশি।
স্পেনে ৫০ শতাংশ মানুষ বেশি মারা গেছে। প্রায় ৪২ হাজার ৯০০ মানুষ বেশি মারা গেছে। এই পরিসংখ্যান ২ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত। একই সময়ে করোনা সংক্রান্ত রোগে আনুষ্ঠানিক মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭০৯ জন। বেলজিয়ামে ৩৭ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮১০০ জন বেশি মানুষ মারা গেছে এই করোনার সময়ে। আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ হাজার ৬০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছে দেশটিতে। ইটালিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি। প্রায় ৪২ হাজার ৯০০ জন ব্যক্তি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মারা গেছে। সরকারি পরিসংখ্যানে করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪৪৮ জন। ব্রাজিলেও স্বাভাবিক সময় থেকে মারা গেছে ৩৮ শতাংশ বেশি, যা ১৯ হাজার ৩০০ জন। সরকারি হিসাবে ৪৬ হাজার ৬৬৫ জন মৃত্যু দেখানো হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে।
স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯৭ হাজার ৩০০ বেশি মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা ১৬ শতাংশ বেশি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এক লাখ ১৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় স্পেনে ৫০ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছে, সংখ্যা যা ৪২ হাজার ৯০০ এরও বেশি। দেশটিতে করোনায় মৃত দেখানো হয়েছে ২৭ হাজার ৭০৯।
রাশিয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ মানুষ বেশি মারা গেছে, যা সংখ্যায় ৯ হাজার ১০০। রুশ কর্তৃপক্ষ করোনায় মৃতের সংখ্যা জানিয়েছে ৭ হাজার ৩০ জন। ইন্দোনেশিয়া মৃত্যু বেড়ে ৫৫ শতাংশ, যা ৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। আনুষ্ঠানিকভাবে ৫১৭ জন করোনায় মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে। এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৫ জনে। এছাড়া পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে ৮৪ লাখ ৬ হাজার ৬৬০ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৪২৯ এর মতো মানুষের। অপরদিকে সেরে উঠেছেন প্রায় ৪৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬ জন।