আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে না : তালেবান

তালেবান শাসনে আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে না বলেছেন তালেবানের একজন ঊর্ধ্বতন সদস্য। তালেবানের সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারীদের ঘনিষ্ঠ তালেবান সদস্য ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি বলেছেন, ‘এখানে কোনরকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকবে না, কারণ আমাদের দেশে এর কোনো ভিত নেই।’

ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা থাকবে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কারণ এটা পরিষ্কার আফগানিস্তান চলবে শরিয়া আইনে। সেটাই শেষ কথা।’

তালেবোনের সুপ্রিম নেতা হিবাতুল্লাহ আকুন্দযাদা দেশের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন বলে আমরা মনে করছি, বলেন হাশিমি।

বিভিন্ন শহরে তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ
আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরে তালেবান বিরোধী বিক্ষোভে অন্তত একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শহর কেন্দ্রের এক চত্বরে স্থানীয় বাসিন্দারা আফগানিস্তানের তিন রঙ-এর জাতীয় পতাকা তোলার চেষ্টা করলে তালেবান যোদ্ধারা গুলি ছোঁড়ে এবং তাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

বিবিসির জানিয়েছে, জালালাবাদ, কুনার এবং খোস্ত শহরেও আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা নিয়ে আজ বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিক্ষোভ দেশের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়বে কিনা সেটা এত তাড়াতড়ি বলা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি সেখানে দ্রুত বদলাচ্ছে এবং তালেবানের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিবিসির পশতু বিভাগের সাংবাদিকরা।

তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকা শেষ গুটিকয় এলাকার একটি পাঞ্জশির উপত্যকা। এখান থেকে ছড়ানো এক ভিডিওতে সাবেক নর্দান অ্যালায়েন্সের পতাকা উড়িয়ে মোটরবাইকের বিশাল এক বাহিনীকে যেতে দেখা গেছে। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তারা নিজেদের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহর ‘প্রতিরোধ বাহিনী’ বলে দাবি করেছে। সালেহ গতকাল একটি অডিও বার্তায় নিজেকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করেন। তাজিকিস্তানে আফগান দূতাবাসের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই সালেহকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তুলে ধরে ছবি পোস্ট করেছে।

যদিও এসব কোনো ঘটনা নিয়ে তালেবান এখনো পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।

শরণার্থীর ঢলের মুখে সীমান্ত বন্ধ করল ইরান
আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা মিজান নিউজকে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত বিষয়ক বিভাগের পরিচালক হোসেইন কাসেমি বলেছেন, সীমান্ত সংলগ্ন ইরানের তিনটি প্রদেশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আফগানিস্তানের ঘটনা প্রবাহ বিবেচনায় এবং ‘করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের’ কারণে আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের তারা যেন ফিরিয়ে দেয়।

কয়েকদিন আগে কাসেমি বলেছিলেন আফগানিস্তান থেকে পালানো শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে আফগান সীমান্তের কাছে ইরান শরণার্থী শিবির তৈরি করছে। জাতি সংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত ইরানে আফগান শরণার্থীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৮০ হাজার।

হেরাতের স্কুলে ফিরেছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা

তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেবার মাত্র চার দিনের মাথায় পশ্চিমের হেরাত শহরে মেয়েদের স্কুলে ফেরত যাবার খবর পাওয়া গেছে। ছাত্রীদের করিডরে গল্পগুজব করতে দেখা গেছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা এএফপি। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না বলেই অনেকে আশংকা করছিলেন।

তালেবান ১৯৯০ দশকে যখন আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে, তখন নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের পড়াশোনা ও চাকরির সুযোগ ছিল না।

এ ঘটনায় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মাঠ পর্যায়ের প্রধান মুস্তাফা বেন মেসাউদ কিছুটা আশার আলো দেখেন। তিনি বলেছেন, তালেবান প্রাথমিকভাবে হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সমর্থন দেখিয়েছে।

তিনি বলেছেন, তাদের সাথে যে কথাবার্তা হয়েছে তাতে এই আশা তৈরি হয়েছে। তবে সবাই তালেবানের এই আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
খবর বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button