সেনবাগে রাস্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে জোরপূর্বক অন্যের গাছ কেটে সাবাড়
মোঃ ফখর উদ্দিন, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
সেনবাগে রাস্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে জোরপূর্বক অন্যের গাছ কেটে সাবাড়
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ৪নং কাদরা ইউনিয়নের চাঁদপুর খলিল চেয়ারম্যান বাড়ির মোঃ বেলায়েত হোসেনের দখলীয় সম্পত্তির বাগানে লাগানো বিভিন্ন জাতের ভিন্ন-ভিন্ন সাইজের বনজ ও ফলদ গাছ গত ৪ আগস্ট কেটে সাবাড় করে ফেলেন একই বাড়ির মরহুম শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল এর স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী-হাফেজা হেলাল বেবির নির্দেশ মোতাবেক কতিপয় স্থানীয় ও অজ্ঞাত যুবক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,খলিল চেয়ারম্যান বাড়ির একটি সদর দরজা সকলের জন্য উম্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও এ আওয়ামীলীগ নেত্রীর ব্যাক্তিগত আরেকটি বিশেষ রাস্তার প্রয়োজনে জায়গা পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে জোর জবরদস্তিমূলক একই বাড়ির মোঃ বেলায়েত হোসেনের মালিকানাধীন দখলীয় সম্পত্তির গাছগুলো কেটে ফেলেন।যে ঘটনায় পুরো এলাকায় একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।এ নিয়ে সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে গত ৫ আগস্ট বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম বাদী হয়ে সেনবাগ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
উক্ত অভিযোগে প্রধান আসামী করা হয় ৪নং কাদরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ কে। ভিকটিম ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ মরহুম হেলালের স্ত্রী হাফিজা হেলাল বেবির সাথে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ এর একটি বিশেষ সম্পর্ক বিদ্ধমান।যার ফলে হাফেজা হেলাল বেবি চেয়ারম্যান এর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একই বাড়ির বেলায়েত হোসেনের পরিবারের সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে আসছেন।
চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ বনাম হাফেজা হেলাল বেবির মধ্যেকার বিশেষ সম্পর্কের কথা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হলে গত ৭ আগস্ট চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ এর পক্ষে এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ স্থানীয়ভাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে বক্তাগণ বলেন,”ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়ায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ এর বিরুদ্ধে ভাইরাল হওয়া সকল বাদ-অপবাদ,অভিযোগ,মিথ্যা-বানোয়াট,বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অপপ্রচার এর অংশ বিশেষ মাত্র। এর সাথে চেয়ারম্যানের কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই”।
উক্ত বক্তব্যে সাংবাদিকরা অনেকটাই কৌতুহলী ও অনুসন্ধানী হয়ে পড়েন।
প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সত্যতার খোঁজে গত ৯ আগস্ট সকাল ১১ঘটিকায় একদল সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজন,প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিকটিম এর পরিবারের সাথে আলাপকালে বেরিয়ে আসে বিচিত্র সব তথ্য। যা হয়তোবা সংবাদকর্মীদের নিকট ছিল একেবারেই অজানা। স্থানীয় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ কে কেন প্রধান আসামী করা হলো এ বিষয়ে জানতে গিয়ে জানা যায়,গত ৪ আগস্ট মোঃ বেলায়েত হোসেন ও হাফেজা হেলাল বেবির মধ্যকার সম্পত্তির বিরোধের সূত্র ধরে স্থানীয় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ জায়গা মাপের অজুহাতে ঐ দিন সময়ক্ষেপন করেন।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সিয়াম,পারভেজ ও সুজন সহ বহিরাগত কিছু অজ্ঞাত যুবক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। স্থানীয় জনগণের অভিমত,হাফেজা হেলাল বেবির হয়ে চেয়ারম্যান নিজেই ঘটনাস্থলে লোকবল জড়ো করেন।
সমবেত যুবকদের মধ্য হতে সিয়াম, পারভেজ, সুজন সন্ত্রাসী কায়দায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ এর উপস্থিতিতে একটি বিশেষ রাস্তা সৃষ্টির লক্ষে গাছগুলো জোরপূর্বক কেটে ফেলেন এবং বেলায়েত হোসেনের পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করলে তারা প্রাণ ভয়ে নিজ ঘরে আশ্রয় নেয়।
অসহায় পরিবারটি ঐ সময় মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।এলাকাবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে শতশত নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে একত্রিত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে হাফেজা হেলাল বেবির ঘরে আশ্রয় নেয়।এলাকাবাসী চারিদিক থেকে তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন।পরবর্তীতে থানা পুলিশ ও উপজেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
সেদিন চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে কেন গেলেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক-গোলাম সারোয়ার বলেন, “একজন চেয়ারম্যান সে তার ইউনিয়নের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।সে চাইলে যে কোন জায়গায় নির্দ্বিধায় যেতে পারেন”।
এক্ষেত্রে এলাকাবাসী ও ভিকটিম এর পরিবার বলছেন ভিন্ন কথা।সে দিন চেয়ারম্যান তার নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে কোন আচরণ না করে বরং সম্পর্কের জায়গাকে সুদৃঢ় করতে গিয়ে ভিকটিম এর পরিবারের সাথে বিরূপ আচরণ করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধির এই রূপ পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণে এখনো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেত্রী হাফেজা হেলাল বেবির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি-ধামকির মুখে অসহায় পরিবারটি আজ নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।