কঠোর লকডাউনে ও খোলা থাকছে পোশাক কারখানা
কঠোর লকডাউন মধ্যে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা।
তারা বলেছেন, সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা জানতে পেরেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখা যাবে। সে অনুযায়ীই তারা কারখানা খোলা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শনিবার দুপুরে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি বলেছেন, যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে পোশাক কারখানা খোলা রাখা যাবে। আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের একটা বৈঠক আছে। সেই বৈঠকে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দেয়া হবে। সে অনুযায়ী আমরা কারখানা খোলা রাখবো।’
পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানও একই কথা বলেছেন, ‘আমরা সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি। এখন পর্যন্ত যতটা আভাস পেয়েছি, আমাদের পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেবে সরকার। সন্ধ্যার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো খোলা রেখে উৎপাদন হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই আমরা চালাতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি পোশাক কারখানা যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে গার্মেন্টস কর্মীরা তখন গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এটা সবাই জানে, ছুটি পেলেই শ্রমিকরা গ্রামের দিকে রওনা দেন। এতে করোনার প্রকোপ আরও ছড়িয়ে পড়বে। গ্রাম-শহর একাকার হয়ে যাবে।
‘কারখানা বন্ধ রাখা যতটা না উপকার, তার চেয়ে খোলা রাখাই বেশি উপকার। বন্ধ হলে অর্ডার বাতিল হবে, বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) চলে যাবে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ কমে যাবে।’
‘ঈদের আগে এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। তাই সার্বিক বিবেচনায় কারখানা খোলা রাখাই উত্তম হবে বলে আমি মনে করি।’
বিকেএমইএ সভাপতি হাতেম বলেন, ‘এই তো কিছুদিন আগে রোজার ঈদের ছুটিতে সপ্তাহ খানেক সব কারখানা বন্ধ ছিল। এরপর এখন যদি আবার বন্ধ থাকে তাহলে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। এরপরও সরকার যা বলবে সেটাই আমরা অনুসরণ করব।’
পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই খুব কঠিন সময় পার করছি আমরা। বায়াররা ঠিকমতো পণ্যের মূল্য পরিশোধ করছে না। দাম কমিয়ে দিয়েছে অনেকে। আমরা সবাই আর্থিক সঙ্কটে আছি। পোশাক রপ্তানি থেকে যে টাকা পাই তা দিয়েই শ্রমিকদের বেতনসহ অন্য সব খরচ করি।
‘কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি হবে না। টাকা পাব না। সামনে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেব কী করে? আমাদের সঙ্কট আরও বাড়বে।’
সে পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক যে ধারা এখনও আছে, সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান হাতেম।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিধিনিষেধের পাশাপাশি আরও কঠোর অবস্থানে গেছে সরকার। সোমবার থেকে সাত দিনের জন্য সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার রাত পৌনে ৯টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।