পুলিশ শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে-“রাজ কর্মচারী”
ইংরেজ শাসন আমলে ১৮৬১ সালে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য। যদিও প্রথমে লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করা হয়েছিল খাজনা আদায়ের জন্য। পরে এই লাঠিয়াল বাহিনীই পুলিশ বাহিনীতে রূপ লাভ করে।
তখন এসপিদের বলা হতো “কোতোয়াল”এবং কোতোয়ালের অফিস জেলা সদরে থাকত বিধায় জেলার সদর থানাকে বলা হতো কোতোয়ালি থানা। এস.আই/সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারকে বলা হত”দারোগা”। দারোগা শব্দের অভিধানিক অর্থ-বল প্রয়োগকারী /জুলুমবাজ।
(যে কারণে পরবর্তী সময়ে দারোগা নাম পরিবর্তন করে এস.আই/সাব-ইন্সপেক্টর/বাংলায় উপ-পরিদর্শক রাখা হয়।)এই দারোগাগণই বল প্রয়োগ করে/জুলুম করে খাজনা আদায়ে নেতৃত্ব দিত। যে কারণে পুলিশ বাহিনী গঠন করার সময় থেকেই সাধারণ মানুষ পুলিশকে ভয় পেত এবং পছন্দ করতনা। গ্রামের মানুষ পুলিশ দেখলে ভয়ে পালিয়ে যেত। অনেক চেষ্টা করেও সেই বদনাম এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নী।
পরবর্তী সময়ে পুলিশের মামলা তদন্ত,দাঙ্গা দমন সহ কাজের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। যে কাজগুলো দ্বারা পুলিশের পক্ষে সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়।যেমনঃ-বাদি,বিবাদি অথবা পক্ষ-বিপক্ষ সবসময় থাকবেই।আর পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট গুলো হয় বাদির পক্ষে যাবে না হয় বিবাদির পক্ষে যাবে। মামলা তদন্ত রিপোর্ট যাদের পক্ষে যাবেনা তারাই অসন্তুষ্ট হবে এবং পুলিশকে মন্দ বলবে। তাছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটিও করতে হয় পুলিশের।
এই জনগণের একটি অংশ যখন আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তখন তাদেরকেও দমন করতে হয় পুলিশের। যেজন্য ঐ সকল লোক পুলিশের প্রতি সংক্ষুব্ধ হয়। অতএব পুলিশের পক্ষে সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। “দুষ্টের দমন সৃষ্টের পালন”এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পুলিশ ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অথবা সঠিক তদন্ত করে সত্যের পক্ষে রিপোর্ট দিলে যারা অন্যায়ের পক্ষে ছিল বা অন্যায় করেও সুবিধা নিতে চেয়েছিল তারা পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান নিবে এবং পুলিশকে পছন্দ করবেনা।
আর যদি কোন দুর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ সদস্য ন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তদন্ত করে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানায় তাহলে যে পক্ষ ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয় সে পক্ষ/ন্যায়ের পক্ষের লোকজন পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান নিবে এবং পুলিশকে পছন্দ করবেনা। তবে যারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানাবে পরোক্ষভাবে দুনিয়াতেও তাদের বিচার হবে এবং পরকালে রয়েছে কঠিনতম শাস্তি। আল্লাহ্ তা’আলা বিচারকের বিচার করবেন আগে।
পুলিশ ইংরেজিতে ছয়টি অক্ষর বিশিষ্ট একটি শব্দ।যেমন:-POLICE= P=Polite(ভদ্র),O=Obedient(নম্র/বিনয়ী), L=Loyal(বিশ্বস্ত),
I=Intelligent(বুদ্ধিমান) C=Courageous(সাহসী), E=Efficient(দক্ষ)।
পুলিশ শব্দের মিনিং করলে যে অর্থ দাঁড়ায় তা যদি শতভাগ বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকুরী হবে পুলিশ।
বিঃদ্রঃ-ইংরেজ শাসনামলে এই বাংলায় জেলা ছিল মোট ১৭টি এবং কোতোয়ালি থানাও ছিল ১৭টি। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৯সালের ১জানুয়ারী টাঙ্গাইল এবং পটুয়াখালী নতুন জেলা হওয়ার পর কোতোয়ালি থানা হয় ১৯টি। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে জেলার সংখ্যা ৬৪টি হলেও কোতোয়াল শব্দ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে কোতোয়ালি থানা সেই ১৯টিই আছে। বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বর্তমানে দুই লক্ষ পাঁচ হাজার।
আই.জি.পি ১জন,এডিশনাল আই.জি.পি ১৭ জন,ডি.আই.জি ৬৩ জন,এডিশনাল ডি.আই.জি ১০২জন,এস.পি ৫৬৭ জন,এডিশনাল এস.পি ৮৮৬ জন,সিনিয়র এএসপি ১১২ জন,এএসপি ৯৩৫ জন,ইন্সপেক্টর(নিঃ)৪৯৫৯,টি.আই(টাউন ইন্সপেক্টর) ৯৬৮,ইন্সপেক্টর(সশস্ত্র)৮০৫,এস.আই(নিরস্ত্র)১৬৪৪৭,এস.আই(সশস্ত্র)২৭৬৯,সার্জেন্ট ১৭১১,এস.আই(নারী) ৬৬১,টিএস আই ৪৩৬,এএসআই( নিঃ) ১৭৭০৯,এএস আই(সশস্ত্র) ৫২৪১,এএসআই(নারী)১০২১,এটিএসআই-২০৯৬,নায়েক(পুরুষ) ৬৯১২,নায়েক(নারী) ১৮,কনস্টেবল ১১৪৫৩১,কনস্টেবল (নারী) ১০৯৬৬ জন। বাকি সব সিভিল স্টাফ।