স্বর্ণ শিল্পে চরম দুর্দিন চলছে হারিয়ে যাচ্ছেন স্বর্ণ কারিগররা
বিজয় চন্দ্র সরকার, জেলা প্রতিনিধি-(কিশোরগঞ্জ)
স্বর্ণ শিল্পে চরম দুর্দিন চলছে হারিয়ে যাচ্ছেন স্বর্ণ কারিগররা
গত তিন বছরে স্বর্ণালংকার তৈরির পেশা ছেড়েছেন কমপক্ষে ২০ হাজার কারিগর। ব্যবসায় টানা মন্দার কারণে অনেকেই স্বর্ণের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন।
পেটের দায়ে পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন স্বর্ণের কারিগররা। গত দশকজুড়ে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় স্বর্ণের বাজার দখল করে নিয়েছে বিদেশি অলঙ্কার। হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি।
পুরান ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে স্বর্ণ কারিগরের সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। গত তিন বছরেই ২০ হাজারের বেশি কারিগর এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। ভরণপোষণের নিশ্চয়তা না থাকায় অনেকেই বংশানুক্রমিক এ পেশা ছেড়ে দিতে চাইছেন।
গত বছর পর্যন্ত পূর্বপুরুষের পেশাটি ধরে রেখেছিলেন স্বর্ণ কারিগর ময়নুল। বর্তমানে কাচামালের ব্যবসা করেন। বলেন, আগে একজন কারিগরের সম্মানের সঙ্গে স্বচ্ছলতাও ছিল। এখন সংসারই চলে না। অনেক মালিকই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। পেটের দায়ে পেশাটি ছেড়েছেন।
তিনি জানান, সীতাহার বা মান্তাসার মতো ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করতে একজন কারিগরের কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত দিন লাগে। অথচ, এ জন্য এখনো তারা পারিশ্রমিক পান দিনে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তারপরও হাতে অনেক কাজ থাকলে পুষিয়ে যেত। কিন্তু, মানুষ এখন খুব কমই স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করছে। যারা টুকটাক স্বর্ণের গহনা পরেন তারা বেশিরভাগই রেডিমেড বিদেশি গহনার দিকে ঝুঁকছেন।
স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি স্বর্ণের বাজারে মন্দার প্রধান কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারের অস্থিরতা ও দেশের বাজারে বিদেশি স্বর্ণালংকারের দৌরাত্ম্য। আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে গিয়ে এ ব্যবসায় ধস নেমেছে।
দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেনি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া স্বর্নালঙ্কার কিনছে না। আগে কোনো উৎসব ছাড়াও দোকানে ভিড় থাকত। একটা ছোট দোকানেও প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেঁচাকেনা হত। এখন সেখানে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বিক্রি হয়। কোনো দিন বিক্রিই হয় না। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে গেছে।
কারিগররা জানান, এক সময়ের জনপ্রিয় সীতাহার, মান্তাসা, হাঁসুলি, সিঁথি পাটির মতো অলংকার এখন আর কেউ তৈরি করাতে চান না। হাঁসুলি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী এসব অলংকারের যে কোনোটি তৈরি করতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ভরি সোনা দরকার। দফায়-দফায় স্বর্ণের দামের উত্থান-পতনে মানুষ এখন আর এগুলো কিনতে আসে না।