আজ সাটুরিয়ার ভয়াবহ টর্নেডোর ৩২ বছর পূর্তি
আজ ২৬ এপ্রিল-২০২১ খ্রীস্টাব্দ, ৩২ বছর পূর্বে ১৯৮৯ সালের আজকের এই দিনে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রলয়ংকারী এক টর্নেডো। মাত্র ২ মিনিটের সেই ঝড়ে সবকিছু লন্ডভন্ডে করে দিয়ে ধ্বংসস্তূপ্তে পরিণত করে সাটুরিয়ার বাজার এবং এর আশেপাশের ১২ টি গ্রাম। ১৮০- ৩৫০ কিলোমিটার বেগের সেই টনের্ডোতে বাজারে কোন ঘর বাড়ির অস্তিত্ব ছিলো না। সাটুরিয়া বাজার এবং এর আশে পাশের ১২ টি গ্রাম যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিলো। লাশের গন্ধে চারপাশ ভারী হয়ে গিয়েছিলো।
সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের কঙ্কাল ছাড়া দৃশ্যত দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷”ইতিহাসের ভয়াল এই ঝড়ের তান্ডবে চাল ভর্তি ট্রাক নদীর ওপারে হাসপাতাল গেটে গিয়ে পড়েছিলো।
১৯৮৯ সালের ভয়াবহ টর্নেডো রেকর্ডভাঙা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
অল্প সময়ের মধ্যে টর্নেডোতে এত ভয়াবহ ধ্বংসলীলার কারণে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সাটুরিয়ার টর্নেডোকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরী ধ্বংস হয়ে যায় ৷ আর এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১,৩০০ মানুষ এবং অঙ্গহানি হয় প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষের, আহত হয় ১২ হাজার মানুষ। গৃহহহীন হয় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ। এখনও অনেকেই সেই পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াচ্ছেন।
তথ্য সূত্র মোতাবেক ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিলের সাটুরিয়ার টর্নেডোকেই এ যাবৎ কালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ টর্নেডো হিসেবে বিবেচিত হয়,যেখানে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়। সে দিন প্রায় ১২ হাজার লোক আহত হয় ও প্রায় এক লাখ লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া উপজেলার ২০টি গ্রাম লণ্ড ভণ্ড হয়ে রীতিমত মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
অল্প সময়ের মধ্যে টর্নেডোতে এ ধরণের ভয়াবহ ধ্বংস লীলার কারনেই ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ টর্নেডো হিসেবে সাটুরিয়ার টর্নেডোকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
কয়েক টা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে, যেমন চর সাটুরিয়ায় থাকা মালামাল ভর্তি ট্রাক উড়ে গিয়ে নদীর উপারে গুদাম ঘরের ছাদে নিয়ে গেছিলো তারপর ও ট্রাকের মালামাল সব ঐ রকমই ছিলো৷
ঘটনাবহুল সেই ২৬ এপ্রিল ছিল বুধবার। রোজার দিনে ইফতার করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে ইফতারের আগে হঠাৎ করেই প্রচন্ড বেগে সাটুরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াল এক টর্নেডো যার আঘাতে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় ১২ টি গ্রাম। মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ধ্বংশ-যজ্ঞে পরিনত হয় সাটুরিয়া।
খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ হতে দেশান্তরে। সরকারসহ বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়ে উঠে। আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পিতা দেশ বরেন্য রাজনীতিবীদ জনাব কর্নেল আব্দুল মালেক সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই রাত থেকে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। উদ্ধার কারীরা চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশের সারি দেখে হতবাগ হয়ে পড়ে। সাটুরিয়া উপজেলার সদর, হরগজ, তিল্লীসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে উঠে।
বিনম্র শ্রদ্ধা সকল নিহতদের আত্নার প্রতি…….