সুনামগঞ্জে ও ছাতকে সূর্যমুখীর হাঁসিতে খুশি কৃষক
দক্ষিন সুনামগঞ্জ ও ছাতক উপজেলা বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী ফুল। সবুজের মধ্যে হলুদ ফুলের গাছ অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতে হাঁসি ফুটেছে কৃষকের মধ্যেও।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, সূর্যমুখী শুধু দেখতে অপরূপ নয়, গুণেও অনন্য।বাংলাদেশের আবহাওয়া, পানি ও মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীর তেলে তেমন নেই।
বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চলতি বছরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২ হেক্টরেরও বেশি জমিতে প্যাসিফিক হাইসিন-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রায় শতাধিক কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ করে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকদের দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।
প্রথমবারের মতো সূর্যমূখী চাষ করা ছাতক উপজেলার ছাতক ইউনিয়নের কান্দি গাও গ্রামের আব্দুল খাবিরের ছেলে মোঃ শিপন আহমদ চাষ করেছেন।
এতে শিপন জানান চাতক কৃষি অফিসের সহযোগীতায় সৃর্যমুখী চাষ করেছি আমি এ চাষে লাভ বান হবো বলে আমার বিশ্বাস। শিপনের বাগান দেখতে আজ সোমবার সকালে গেলে দেখাযায় সুর্যমুখী বাগান দেখতে দৃর্শনার্থী অনেক ফটো সেলপি তুলা অব্যাহত চলছে। দৃর্শনার্থী ছাতক ইউনিয়নের মোহাঃ জমির হোসাইন জানান আজকের সকাল যেন আমার অন্যরকম সকাল মনে হচ্ছে। নিজে কে আনন্দিত লাগছে। জমির হোসাইনের মত অনেকই প্রতিদিনে আসেন।
এদিকে পশ্চিম পাগলার ইউপি সদস্য আলী আহমদ জানান, প্রথমবারের মতো ১০ শতক জমিতে হাইসি-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার ধারণার চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। আমি আশাবাদী এই চাষে লাভবান হবো। ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করবো।
জয়কলস ইউনিয়নের আরেক চাষি পিন্টু তালুকদার বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবছর প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। সহযোগিতা পেলে আগামীবছর আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করবো।
এব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষে এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইসিন-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যায় তাতে কোনও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। বাজার থেকে যে সাধারণ সয়াবিন তেল কিনি তাতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শনিবার (৬ মার্চ) সকালে পশ্চিম পাগলার ইনাতনগর ও ডাবরস্থ সোনারগাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটে আছে সূর্যমুখী ফুল। সেই বাগানের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন এই প্রতিবেদক। সেই পোস্ট নজর এড়ায়নি সৌন্দর্য্যপিপাসুদের। খোঁজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলবাগানের সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখতে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীদের।
উল্লেখ্য, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এর তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। ভিটামিন ই ও ‘ভিটামিন কে’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ।