পাইকগাছায় ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে লবনপানি উত্তোলনের অভিযোগ তদন্তে প্রশাসন
এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)
পাইকগাছায় ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে লবনপানি উত্তোলনের অভিযোগ তদন্তে প্রশাসন
পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘের মালিকরা গেট দিয়ে এবং অবৈধভাবে ওয়াবদার রাস্তা কেটে লবন পানি তুলে মৎস্য চাষ করার অভিযোগ উঠেছে। লবন পানি উঠার ফলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও থানার ওসি মোঃ এজাজ শফী উপজেলার চক হিতামপুরের বিল সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লবন পানি যাতে ঘের মালিকরা উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় বোরো চাষীদের গেট ও ওয়াবদার রাস্তা কেটে গেট তৈরীর স্থান বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের চক হিতামপুর বিলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশী সময় ধরে লবন পানি তুলে মৎস্য চাষ চলে আসছে।
কিন্তু ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারী হইতে চরমলই, মেলেক পুরাইকাটি, গদাইপুর ও হিতামপুর গ্রামের জমির মালিকরা লবন পানি না তুলে মিষ্টি পানি তুলে ধান ও মৎস্য চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুয়ায়ী আইল সীমানা নির্ধারন করে স্যালো মেশিন স্থাপন করে মিষ্টি পানি তুলে ধান চাষ এবং পোনা মাছ ছেড়ে দেন।
কিন্তু প্রতিপক্ষ ঘের মালিক রাতের আঁধারে বিলের মধ্যে চিংড়ি ঘেরের নীতিমালা উপেক্ষা করে লবন পানি তুলে দিচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, লবন পানি উত্তোলন করলে তাদের ধানের ফসল নষ্ঠ হবে এবং ছোট পোনা মাছ মারা যাবে। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্থানীয় কৃষক হাফেজ মতিয়ার রহমান জানান, এ বছর আমি ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। বর্গা চাষি কাজী মূকুল জানান আমি ১৫বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি।
গত বছর লবণ পানির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আব্দুল মান্নান গাজী জানান, গত বছরের ন্যায় এ বছর ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কৃষকরা নিঃশ্ব হয়ে যাবো। এ ঘটনায় মুকুল মোড়ল, মান্নান, মোঃ আল মামুন, কাজী মুকুল উদ্দীনসহ স্থানীয় জমির মালিকরা চরমলই এলাকার মোঃ আজিজুল হক সানা (আকু), মোঃ সিরাজুল হক সানা ও চুকনগরের মোঃ সাইদুর রহমানে বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর নিকট প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সংসদ সদস্য অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত পুর্বক সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ণ সমাধানের জন্য প্রেরন করেছেন।
এদিকে গতমাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু আগামী দুই বছরের মধ্যে উপজেলাকে লবন পানি মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছেন। কিন্তু ঘের মালিকরা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্নস্থানে লবন পানি তুলে দেওয়ার কারনে ঘেরের পাশে যে সমস্ত ধানের জমি রয়েছে, সেই সমস্ত জমিতে লবন পানি ঢুকে পড়ছে। ফলে কৃষকরা আশংকা করছেন তাদের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও থানার ওসি মোঃ এজাজ শফী লবন পানি তোলার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গদাইপুর ইউপির চক হিতামপুর বিল সরজমেনি পরিদর্শন করে লবন পানি তোলার সত্যতা পান। এ সময় তিনি স্থানীয় বোরো চাষীদের পানি সরবরাহের গেট ওয়াবদার রাস্তা কেটে যে স্থানে গেট তৈরী করা হয়েছে সেই স্থানগুলি বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ফসলি জমিতে লবন পানি তোলার কোন সুযোগ নেই। যদি কেহ করে তাহলে তাহার বিরুদ্ধে যথাযত আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।