বাঁশখালীর আশঙ্কাজনক সড়ক দূর্ঘটনার কারন ও প্রতিকার নিয়ে জানালেন সুশীর দে টুটু
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালীর আশঙ্কাজনক সড়ক দূর্ঘটনার কারন ও প্রতিকার নিয়ে জানালেন সুশীর দে টুটু
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার প্রধান সড়ক সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গনে দির্ঘদিন থেকে বাঁশখালী ও চট্টগ্রামের একাউন্ট ইউজাররা তাদের প্রোফাইল পিকে “বাঁশখালীতে নিরাপদ সড়ক চাই”- দাবী জানানো সহ প্রচুর লেখালেখি, মানববন্ধন চলতে থাকলেও প্রশাসনিক কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হচ্ছেইনা।
দিনদিন মৃত্যুর মিছিল দির্ঘ থেকে দির্ঘতর হচ্ছে। সড়ক দূর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহনের উম্মাতাল এ সময়ে ২১ ফেব্রূয়ারী’২১ ইং মহান ভাষা দিবসের দিনেও উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা কিছুক্ষন আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্বকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সড়ক দূর্ঘটনার কারন ও প্রতিকার নিয়ে সরেজমিনে সমীক্ষা চালিয়ে সময়োপযুগী একটি প্রতিবেন লিখেছেন বাঁশখালীর আলোচিত সমাজকর্মি যুবসমাজের আইকন “সুশীল দে টুটু।”
অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর বলে একটা কথা আছে। মারাত্মক কিছু সমস্যা যেভাবে আমাদের মনে ছাপ ফেলার কথা, সেভাবে কি এখন আর ছাপ ফেলে? যে কোনো সময় আপনি আমিও ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে পারি। আমরা সবাই হয়তো নিদারুণ কষ্টকর ঘটনাগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি অথবা অতি শোকে পাথর হয়ে গেছি। না-কি দূর্ঘটনার মতো মারাত্মক দূর্ঘটনার সাধারণ মানুষের পতিত হওয়া দেখলেও তা দায়িত্বশীলদের কাছে সাধারণ চলমান ঘটনা বলেই প্রতীয়মান হয়- এটাই আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রতিদিন বাঁশখালীর কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংবাদ এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। প্রতিটি দুর্ঘটনার খবর খুব গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আসেনা। এটা সম্ভবও না। কিছু কিছু সড়ক দুর্ঘটনার পর সরকারের দায়িত্বশীলদের টনক নড়ে তারপর আবার নতুন কোন দুর্ঘটনার খবরে আগেরটি চাপা পড়ে যায়। কোন কোন মৃত্যুর খবর বিচ্ছিন্নভাবে পত্রিকার এক কোণে পরে থাকে। একটি মৃত্যু মানেই একটি পরিবারের চরম বিপর্যয়।
যারা প্রিয়জন হারায় কেবল তারাই সেই কঠিন মর্মবেদনা উললব্ধি করতে পারে। বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দেখে অন্তত তাই মনে হয়। এভাবেই অপরিণত বয়সের মেধাবী নাগরিক হারিয়ে পরিবারের পাশাপাশি দেশও পিছিয়ে যাচ্ছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ কতটা ভারী তা বুঝতে সমর্থ হওয়া অবশ্যই উচিৎ।
দূর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে বিছানায় কাতরায় তাদের কষ্ট মৃত্যু যন্তণা থেকে কোন অংশে কম নয়। অনেকে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে বেঁচে থেকে অবর্ননীয় কষ্ট ভোগ করছে। তবু কি আমরা সচেতন হচ্ছি? তাই আসুন অন্যের জায়গায় একবার নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিই।
বাঁশখালীতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণঃ *সরু অপ্রশস্ত সড়ক *দ্রুতগতি সম্পন্ন যানবাহন *মাত্রাতিরিক্ত নন রেজিস্টার্ড মোটর গাড়ি *মাছের পোনা ও গভীর সমূদ্র থেকে আহরন করা মাছ বাহিত গাড়ি থেকে পরা পানি *লবন বাহিত গাড়ি থেকে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরা লবন *প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি *রাস্তার উপর গজিয়ে উঠা অবৈধ সিএনজি ষ্টেশন *রাস্তায় উভয় পার্শ্বে গজিয়ে উঠা ছোট ছোট দোকান, বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ও হাট-বাজার *লাইসেন্স বিহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ ড্রাইভার। * অধিক সংখ্যক যান চলাচল নিয়ন্ত্রনে ট্র্যাপিক পুলিশের ব্যবস্থা না করা।
(চলতি বঝরের জানুয়ারী মাস থেকে শুরু হওয়া মৃত্যু মিছিলে শুধু মাত্র গত ৭ দিনে মৃত্যু সংখ্যা ৯, গত দুমাসে মৃত্যু সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করা মানুষের সংখ্যাও দুশ’র কম নয় )
বেশির ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দ্রুতগতি আর চালকের অজ্ঞতাই দায়ী। কারণ সারাদিন লবনের গাড়ী আসা যাওয়ার সময় কিছু লবন রাস্তায় পরে আর সে লবনে রাতে কুয়াশা পরলে লবন গলে বিটুমিনের সাথে মিশে পিচ্ছিল হয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে মাছের গাড়ি থেকে পরা পানি লবন আর বিটুমিনের সাথে মিশে মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন গাড়ীর নিয়ন্ত্রনে রাখা অনেক সময় সম্ভব হয়না- আর এই ব্যাপারটাই অনেক ড্রাইভার আর বাইকাররা জানেনা অথবা দ্রুতগতির কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে দূর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
বাঁশখালীর প্রধান সড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট, তাও আবার অনেকাংশে ফুটপাত বিহীন। গত ২০ ফেব্রূযারী’২১ ইং শনিবার বাঁশখালীর প্রধান সড়কে বিকালে (৫.৪০ মিনিট থেকে ৫.৫০ মিনিট) উপজেলার বাণীগ্রাম ব্রাহ্মণ পাড়া টেকে মাত্র ১০ মিনিটে উভয় পার্শ্বে চলাচলরত গাড়ির বাস্তব চিত্র দেখলে যে কেউ ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারবেন।।
প্রাইভেট কার- ৭,সিএনজি – ৬৭, মটর সাইকেল -২৩, মাইক্রো -২, এম্বুলেন্স -১, পাজেরো -১, বাস ২টি, টমটম-১৭ বড় ট্রাক-৫, মিনিট্রাক ৭, কভারভ্যান ২, এস আলম-১, সানলাইট ১, মহেন্দ্র-১, রিক্সা ভ্যান-১, নরমাল রিক্সা-১, সাইকেল -১টি = সর্বমোট-১৩৯ টি যানবাহন যাতায়ত করেছে এ পয়েন্টে।
পরিশেষে মাননীয় জেলা প্রশাসক, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়, বাঁশখালী পুলিশ প্রশাসন ও দোহাজারী সড়ক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা মহোদয় এর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন জানাই- ট্রাকের উপরে নীচে ট্রিপল দিয়ে লবন পরিবহন অথবা নদীপথে লবন পরিবহনে বাধ্য করা, মাছের পোনা বাহিত গাড়িতে নিচে ট্রিপল দিয়ে রাস্তার পানি ঝরে পরা রোধে নজরদারি করা, দ্রুততম সময়ে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া, ফুটপাত সহ রাস্তা প্রশস্তকরণ, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স, রাস্তার দুপাশের স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া, বাইক চালকদের হ্যালমেট ব্যবহার নিশ্চিতে প্রশাসনিক কঠোরতা সহ উপজেলা প্রধান সড়কের গূরুত্বপুর্ন ব্যস্ততম পয়েন্টে ট্রাপিক পুলিশ নিয়োগসহ কর্তৃপক্ষের কঠোরতা সর্বোপরি জনসচেতনতাই পারে বাঁশখালীবাসীকে অধিকত গাড়ী দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা করে মৃত্যুর মিছিল থামাতে, পরিবারের স্বজনদের আহাজারী থামাতে এবং সড়কে শৃংখলা ও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করতে।
সর্বশেষে সমাজকর্মি সুশীল দে টুটু দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাঁশখালী প্রধান সড়কে আশঙ্কাজনকহারে সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহত নিয়ে বাঁশখালীর সব বয়সের সকল পেশার সর্বস্তরের মানুষের মনে যে শঙ্খা, অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তা দ্রূত সময়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।