জেলার খবর

জমি জমা বিরোধের জেরে মনিরামপুর ভাইকে পিটিয়ে জখম।

আবদুল্লাহ আল মামুন, মনিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি-(যশোর)

জমি জমা বিরোধের জেরে মনিরামপুর ভাইকে পিটিয়ে জখম।

মণিরামপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় ভাইকে পিটিয়ে জখম করে টাকা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ আপন ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

রোববার উপজেলার সদর ইউনিয়নের শোলাকুড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটানয় জখমের শিকার আহত বড় ভাই মোঃ আব্দুল কাদের বিশ্বাস (৬০) মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আহতের জামাই বাদী হয়ে মণিরামপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সরেজমিন ও অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার মণিরামপুর (সদর) ইউনিয়নের শোলাকুড় গ্রামের মৃত রহমান বিশ্বাসের পুত্রদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ জমিজমার ভাগ বটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

মৃত রহমান বিশ্বাস জীবিত থাকা অবস্থায় তার সমূদ্বয় সম্পত্তি ৫ পুত্রের মধ্যে সমান ভাগ-বটোয়ারা করে দেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর কনিষ্ঠ পুত্র আরশাদ আলী (৪০) অন্যায়ভাবে বড় ভাই গরুর ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বিশ্বাসের ভাগের জমি জোর-জবরদ্বস্থি করে কেড়ে নিতে চাই। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার শালিশ-বৈঠকে নিষ্পত্তি হলেও-সেটা আরশাদ মানতে নারাজ।

সে বিভিন্ন সময়ে বড় ভাই কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ হত্যার করার হুমকি প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ১০টার দিকে শোলাকুড় গ্রামের মুনছুর আলীর পুত্র চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজিজুর (৪০) কে সাথে নিয়ে লোহার রড ও ধারালো ছুরি নিয়ে বড় ভাই আব্দুল কাদেরের বসত বাড়ীসহ ঘরে থাকা বিভিন্ন রকম জিনিষপত্র ভাংচুর করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

এ সময়ে আব্দুল কাদের বাধা দিলে তাকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথিসহ বিবাদীদ্বয়ের হাতে থাকা লোহার রড ও ছুরি দিয়ে বেদম পারপিটসহ মারাত্মক জখম করে রক্তাক্ত করে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এ সময়ে আসামীরা কাদেরের পকেটে গরু ক্রয় জন্য থাকা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বের করে নেয়।

তখন আহত কাদেরের স্ত্রী মিনু বেগম (৫৫) ও কন্যা মমতাজ বেগম বাধা দিলে তাদেরকে মারপিট করা হয় এবং আরশাদের স্ত্রী তহমিনা বেগম মমতাজের গলায় থাকা সোনার চেইনটি ছিনিয়ে নেই। এ সময়ে তাদের চিৎকারে এলাকাবাসি এগিয়ে আসলে আসামীদ্বয় চলে যায়। এলাকাবাসির সহযোগিতায় আহত আব্দুল কাদেরকে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।

আহত আব্দুল কাদের বিশ্বাসের স্ত্রী মিনু বেগম জানান, আমার স্বামী একজন গরুর ব্যবসায়ী। সে ব্যবসার জন্য বাইরে-বাইরে থাকে যে কারণে আমার দেবর প্রায় সময়ে আমাদের উপর চড়াও হয়ে বিভিন্ন রকম ক্ষতি সাধন করে। গতকাল আমার স্বামীকে মারপিটের সময়ে আমার মেয়ে ঠেকাতে গেলে তার গলায় থাকা সোনার চেইনটি আমার দেবরের স্ত্রী তহমিনা বেগম ছিনিয়ে নেয়।

হাসপাতালে আব্দুল কাদেরের জ্ঞান ফিরলে তিনি বলেন, আমি গরুর ক্রয়ের জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম, কিন্তু গরু ক্রয় করতে না পারায় সে টাকা আমার পকেটে ছিল। আমাকে জখম করে চলে যাবার সময়ে আমার পকেটে থাকা সমুদ্বয় টাকা আজিজুর ও আরশাদ নিয়ে গেছে।

বিষয়টি জানার জন্য আজিজুর রহমানের ব্যবহারিত ০১৯৪০২৬১২৮০ নম্বর মুঠো ফোনে কল দিলে-তিনি বলেন, কাদের ও আরশাদ ভাই-ভাই। ওরা নিজেরা কি নিয়ে মারামারি করেছে আমি জানি না। আমি মারামারি ঠেকাতে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু আমি জানি না। তবে আহতের ছোট ভাই আরশাদ আলী মারামারির কথা স্বীকার করলেও টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এ ঘটনায় আহত আব্দুল কাদেরের মেয়ের জামাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে এদিন রাতেই শোলাকুড় গ্রামের মুনছুর আলীর পুত্র আজিজুর রহমান (৪০) এবং একই গ্রামের আহতের ছোট ভাই আরশাদ আলী (৪০)কে বিবাদী করে মণিরামপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, আব্দুল কাদেরের মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। সিটি স্কীনের রির্পোট হাতে পাবার পর বুঝা যাবে কি পরিমান ক্ষত হয়েছে এবং ব্রেনের কোন সমস্যা হয়েছে কি-না। রির্পোটের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী চিকিৎসা প্রদান করা হবে।

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই মারমারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button