সৌদি রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলা শাখার কঠিন পরিস্থিতি।
মোঃ রুস্তম খাঁন,সৌদি আরব রিয়াদ প্রতিনিধি-ঃ
সৌদি রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলা শাখার কঠিন পরিস্থিতি।
সৌদি রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলা শাখা এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত যে কয়েকটি বিদ্যালয় প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধার সন্তানদের কর্মোক্ষম, আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সে প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলা শাখা ইতোমধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলে স্বীকৃতিলাভে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে থমকে আছে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে। বিশ্বের সব দেশের মত সৌদি আরব ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পরিপত্র জারী করায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত এই প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই বন্ধকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স এক জরুরীসভায় বোর্ড চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ ‘জুম’ ক্লাউড অ্যাপস এর মাধ্যমে নিয়মিত রুটিন অনুসরণে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যহত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ও অভিজ্ঞ এবং প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষকমন্ডলি নিরসভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ বেশ স্বতঃস্ফূর্ত। বিদ্যালয়ে উপস্থিত ক্লাসের অভাব এই অনলাইন ক্লাস যেন শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বলেও অনেক অভিভাবক দাবী করেন।
মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী শুধু যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে, তা নয়। প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারাও কর্মহীন অবস্থায় গৃহবন্দী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। মাসিক উপার্যনও তাদের শূন্যের কোটায়। তথাপি প্রতিষ্ঠানের বোর্ড চেয়ারম্যান তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৪২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রবাসে এবং দেশে অবস্থানরত পরিবারের কথা চিন্তা করে প্রবাসী অভিভাবকদের কাছে তার সন্তানের টিউশন ফি সাধ্যমত পরিশোধের এক মানবিক আবেদন করেন। তাতে যে ক’জন সাড়া দিয়েছে, তাদিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মার্চ এবং এপ্রিল মাসের হাফ বেতন দেয়া সম্ভব হলেও কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিশ্রুতিশীল প্রবাসী এই প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে অধিকাংশ প্রবাসীদেরই যেন “নুন আনতে পান্তা ফুরায়” এমন এক রূঢ় বাস্তবতা তাদের প্রতিনিয়ত ধাওয়া করছে। তাদের পক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত সন্তানের টিউশন-ফি দেওয়া এক অচিন্তনীয় বিষয়। কিন্তু বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সেপ্টেম্বরের আগে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার কোন সুযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নিঃস্ব হাতে অতিদীর্ঘ এই সময় প্রতিষ্ঠান কীভাবে পাড়ি দেবে, তা-ই এখন ভাবনার বিষয়!
ইতোমধ্যে বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মানবতাবাদী নেত্রী, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বরাবর শিক্ষকদের বেতন/ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে ছয়মাসের প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি কলেজ শাখার বর্ষসমাপনী, পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণি ও দশম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী এবং অন্যান্য শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার অনলাইন পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। লক-ডাউনের মাঝেও যেন শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় যেন ব্যত্যয় না ঘটে, চেয়ারম্যান মহোদয় সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন।
লক-ডাউনে বিপর্যস্থ জনজীবনে স্থবির অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সদাশয় সৌদি আরবের বাদশাহ-এর নির্দেশনা মোতাবেক বেশ কিছু ক্ষেত্রে লক-ডাউন শিথিল করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কাজেরও সুযোগ দিয়েছেন। তাই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলির স্বাভাবিক জীবনধারা সচল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ আবেদন রেখেছেন, তারা যেন সাধ্যমত তাদের সন্তানদের টিউশন-ফি পরিশোধ করেন। একমাত্র শিক্ষার্থীর টিউশন-ফি প্রতিষ্ঠানের সকল ব্যয়-ভার নির্বাহের প্রধান উৎস। তিনি আরো দাবী করেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাঁদের পারিবারিক জীবন সচল রাখতে পারলে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন আরো অনেক বেশি পরিমাণে মসৃণ হবে। তাই সকল সম্মানিত অভিভাবককে সাধ্যমত এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।