সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী আজ
প্রখ্যাত নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৪৯ সালের এই দিনে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেলিম আল দীনের। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর গবেষণা করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলা নাটকের শিকড়সন্ধানী এ নাট্যকার ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন।
নাট্যকার সেলিম আল দীন ছিলেন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সেই সূত্রে ঘুরেছেন বহু জায়গায়। লেখক হবেন এমন স্বপ্ন তিনি ছেলেবেলা থেকেই দেখেছেন। এ বিষয়ে তিনি পাকা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর। লেখক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে। সে বছর কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে তার একটি প্রবন্ধ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সেলিম আল দীন ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাটকে প্রয়োগ করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফকে সঙ্গী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার। তার প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায়। প্রথম মঞ্চনাটক সর্প বিষয়ক গল্প মঞ্চায়ন হয় ১৯৭২ সালে। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেন। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয় এবং এটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করে। জীবনের শেষভাগে ‘নিমজ্জন’ নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে তার কলম থেকে।
সেলিম আল দীনের উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে- ‘সর্পবিষয়ক গল্প’, ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মূল সমস্যা’, ‘প্রাচ্য’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘বাসন’, ‘আততায়ী’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘চাকা’ ‘শকুন্তলা’, ‘হরগজ’, ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’, ‘পুত্র’, ‘বনপাংশুল’, ‘স্বপ্ন রমণীগণ’ ও ‘ঊষা উৎসব’।
সেলিম আল দীন ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০২ সালে কথাসাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে নান্দিকার পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাটক রচয়িতার পুরস্কার, একই বছর শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০০১ সালে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পান। বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানীয় পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন ২০০৭ সালে। ১৯৯৫ সালে তিনি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটকের ওপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দেশজ নাট্য ও সংস্কৃতির এই অনুসন্ধানী পথিকৃৎ মারা যান। করোনার কারণে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল অনলাইনে আয়োজন করছে দুদিনব্যাপী ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন জন্মোৎসব ২০২১’।