আরো...

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নজর রাখতে হবে,মাঠ কর্মীরা যেন সাংবাদিকতার চৌকাঠ ডিঙিয়ে সাংঘাতিক না হয়ে উঠেন

সাহাদাৎ শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নজর রাখতে হবে,মাঠ কর্মীরা যেন সাংবাদিকতার চৌকাঠ ডিঙিয়ে সাংঘাতিক না হয়ে উঠেন

পরনে মুজিব কোট, বুকে নৌকার ছবি’–ওই প্রজাতিটি শুধু নিজেদের অপরাধ ঢাকতে বা প্রভাব বিস্তার করতেই ব্যবহার করে আসছে। হয়তোবা অতীতে বিএনপি’র সময়েও এমন প্রজাতির হাঁকডাক ছিল। অনেকেই বলে থাকেন ২০০১ সালের পর থেকে এমন ‘কাউয়া’ প্রজাতির প্রজনন বাড়তে থাকে।

এ নিয়ে সকল দলের অভ্যন্তরে কথা হচ্ছে । তারা বিব্রতও বটে। ‘কাউয়া’ কি কেবল রাজনীতিতেই আছে? সাংবাদিকতায়ও তারা আছেন প্রবলভাবে। সংবাদপত্রের যুগে ছিল। অনেক নাম না জানা সাপ্তাহিক, দৈনিক, মাসিকের সম্পাদক, রিপোর্টার, ফটোগ্রাফাররা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বেড়াতেন। সচিবালয়ে ব্রিফকেস সম্পাদকও নাকি দেখা যেতো। যাদের পত্রিকার সকল অস্তিত্ব ওই ব্রিফকেসের মাঝে ছিল। ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়ের সেলোফিন ভিত্তিক পত্রিকার কথাও জানা ছিল।

সেলোফিন পেপার কিনে ওপরে শুধু পত্রিকার মাস্ট হেড বদলে ফেলা হতো। ছিল শত শত অপরাধ ভিত্তিক পত্রিকার সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। তারপর বেসরকারি টেলিভিশন বিস্ফোরণ ঘটার পরেও নানা রূপের সাংবাদিকরা আত্মপ্রকাশ করতে থাকেন। গ্রামে-গঞ্জে শহরে এমনকি রাজধানীতেও নানা দফতরে এদের প্রতাপ। এই প্রজাতির সাংবাদিকরা সাম্বাদিক,‘সাংঘাতিক’ ইত্যাদি নামে চিহ্নিত। অনলাইন ওয়েব পোর্টাল আসার পর এখন বাংলার ঘরে ঘরে অনলাইন পত্রিকা এবং সাংবাদিক।

শুধু ওয়েব পোর্টালই নয়, অনলাইন টিভিরও অভাব নেই । রাজধানীর বাইরেও কোনও কোনও উপজেলায় ৪/৫টি অনলাইন টেলিভিশন তৈরি হয়েছে। মাইক্রোফোন হাতে তাদের কর্মীরা ছুটে চলছেন। খবরের খোঁজে ছুটছেন কমই, অধিকাংশই সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি, তাদের ভয় দেখানো ও প্রতারণার লক্ষ্য নিয়ে ছুটছেন অর্থ উপার্জনের ধান্দায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই এমন অনেক সাংবাদিক পরিচয়দানকারীদের দেখা মেলে, যারা একেকজন এক হালি থেকে শুরু করে এক ডজন গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত । কিন্তু তাদের পেশা ভিন্ন।

সাংবাদিকতার নাম সঙ্গে রাখা, প্রতিপত্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শিশু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে যে নারী গ্রেফতার হয়ে ছিলেন, তিনি শুধু সরকারি দলেরই নয়, গণমাধ্যমের সঙ্গেও জড়িত। তাকে আটক করার পরে তিনি নাকি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দাবি করেছেন। উচ্চারণ করেছেন কারও কারও নাম।

রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ সাহেব গ্রেফতার হবার পরেও আমরা এমন নিদর্শন দেখেছি। সাংবাদিকতায় ‘সাংঘাতিক’দের অনুপ্রবেশের পেছনে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ভোট নির্ভরতাকেও দায়ী করেন অনেকে। ভোট ব্যাংক সমৃদ্ধ করতে অফিস সহকারী থেকে রাস্তার হকার, ক্যানভাসার, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিঁচকে ছোর, পতিতা, গণ্ড মূর্খ, পুলিশের সোর্স, ফ্লাক্সিলোডের দোকানিকেও সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যপদ দেওয়ার অভিযোগও প্রমাণিত।

তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন পোর্টাল, টিভির কারণে এসব ‘সাংঘাতিক’দের দৌরাত্ম্য এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে । এদের জন্য মুশকিল হয়ে উঠেছে পেশাদার সাংবাদিকদেরও কাজ করা। বর্তমানে শহর বন্দর গ্রামগঞ্জে পেশাদারদের চেয়ে ‘সাংঘাতিক’দেরই রাজত্ব। রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কমকর্তা এবং সাধারণ মানুষ এই ‘সাংঘাতিক’দের কাছে জিম্মি।

পরিচিত বা মূলধারার পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল বা টেলিভিশনের সাংবাদিকরা তুলসি পাতা, এমন দাবি করার সামর্থ্য নেই। কারণ মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে বার্তা কক্ষে এমন কেউ কেউতো আছেনই। এরাও তৈরি হন শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করার প্রক্রিয়ায়। সকল পেশার মতো এই পেশাতেই নৈতিক স্খলন ঘটে এমন মানুষ নেই, সে কথাও বলা যাবে না। তারা আছেন, হয়তো থাকবেনও।

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নজর রাখতে হবে, তাদের কর্মীরা যেন সাংবাদিকতার চৌকাঠ ডিঙিয়ে সাংঘাতিক না হয়ে উঠেন। একইভাবে অপরাধ জগতের মানুষের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সকল স্তরের পেশাজীবী সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

একইভাবে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে ভোট ব্যাংক বাড়াতে এইসব ‘সাংঘাতিক’দের প্রশ্রয় দেওয়া থেকে দূরে থাকার জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি। একই সাথে অনুরোধ করছি প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের তারা যেন সামান্য সুবিধার জন্য এইসব মৌসুমি কাউয়া নেতাদের প্রশ্রয় না দেন। আর আমার এই অনুরোধটি একটু বিবেচনা করলে অন্তত মৌসুমি কাউয়া নেতা ও ‘সাংঘাতিক’ অনুপ্রবেশে কিছুটা হলেও ভাটা আনা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button