প্রযুক্তি

ধামরাইয়ে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু তৈরী করে প্রশংসায় ভাসছেন দশম শ্রেণির ছাত্র সোহাগ

রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ

ধামরাইয়ে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু তৈরী করে প্রশংসায় ভাসছেন দশম শ্রেণির ছাত্র সোহাগ

ঢাকার ধামরাইয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ মাটি, বাঁশ ও সিমেন্ট দিয়ে পদ্মা সেতুর আদলে সেতু তৈরী করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

তার বানানো এই পদ্মা সেতু দেখেই আসল পদ্মা সেতু না দেখা অনেকেই স্বাদ মেটাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পদ্মা সেতু দেখতে তার বাড়িতে মানুষের ভিড় জমে থাকে। সোহাগ ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া এলাকার কৃষক মোহাম্মদ সুলতান আলীর ছেলে। সে ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল ও কলেজে ব্যবসা শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্র।

সরেজমিনে ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সোহাগ নিজ বাড়িতে অবিকল পদ্মা সেতুর আদলে একটি সেতু তৈরি করেছে। বাঁশ, সিমেন্ট, মাটি ও রঙ দিয়ে রূপ দিয়েছে চমৎকার একটি পদ্মা সেতুর। এটি যে কারও নজর কাড়বে। সেতুটি দেখতে শুধু গ্রামবাসীই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। শুরুতে বাবা-মা বকাঝকা ও প্রতিবেশীরা কটু কথা শুনালেও পদ্মা সেতুর রূপ দেখে এখন তারা খুশি। বাড়ির পাশে এই পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে।

সোহাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। এর আগে ২০১৯ সালে একটি সেতু তৈরি করেছিল সে। তবে সেতুটি শুধু মাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করায় নির্মাণের কিছু দিন পরই ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। পরে হুবহু পদ্মা সেতু বানানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ১ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু করে। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ২৬ মার্চ তার পদ্মা সেতু বানানোর কাজ শেষ হয়।

সেতুটি তৈরিতে মাটি, বাঁশ, সিমেন্ট, মোবাইলে ব্যবহার করা ছোট বাতি ও সাদা-কালো রঙ ব্যবহার করেছে সোহাগ। বাড়ির পাশে এই পদ্মা সেতু তৈরি করেছে সে। সেতুটিতে চারটি লেন করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে বাতি। নিচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রেললাইন। নিচে মাটি খুঁড়ে রূপ দেওয়া হয়েছে পদ্মা নদীর। দুই লেনের মাঝখানে ফুলের চারাসহ এক প্রান্তে রয়েছে চেকপোস্ট। এক কথায় প্রাণবন্ত একটি পদ্মা সেতু। দেখে মন ভরে যায় দর্শনার্থীদের।

সোহাগ জানায়, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর দিনই সিদ্ধান্ত নিই আমি একটি সেতু বানাবো। কিন্তু কোনো ধরনের নকশা ও পর্যাপ্ত অর্থ আমার কাছে ছিল না। এজন্য পর পর দুটি সেতু তৈরি করলেও তা ভেঙে যায়। পরে ইন্টারনেট থেকে নকশা সংগ্রহ করি। হাত খরচের টাকা দিয়ে সিমেন্ট ও বাঁশ সংগ্রহ করে ধীরে ধীরে সেতুটি তৈরি করি। প্রথম দিকে বাবা-মা অনেক বকাঝকা করতো। আশপাশের মানুষও কটু কথা বলতো। কিন্তু আমি আমার মত কাজ করেছি। আজ মানুষ এসে ভিড় করছে সেতুটি দেখার জন্য। এতেই বাবা-মা অনেক খুশি। আমারও ভালো লাগছে। তবে আরও ভালো কিছু করতে চাই।

সোহাগ আরও জানায়, আমি বড় হয়ে একজন ভালোমানের ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। দেশে আর কোনো সেতু তৈরিতে যেন বিদেশিদের সহযোগিতা প্রয়োজন না হয়, সেজন্য আমি প্রস্তুত হতে চাই। দেশসহ বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারি এমন একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন আমার।
মানিকগঞ্জ জেলা সহ বিভিন্ন দূর দূরান্ত থেকে পদ্মা সেতু দেখতে এসে মানুষ খুবই আনন্দিত হচ্ছে সেই সাথে দশম শ্রেণির ছাত্র সোহাগের এ’কাজের প্রশংসা করছে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের তার শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ সহ যত্ন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন প্রয়োজনে সরকারি সহযোগিতা নিতে পারেন বলে জানান সোহাগের বানানো পদ্মা সেতু দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।

লোকমুখে শোনে সূতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজা সোহাগের বানানো পদ্মা সেতু দেখে বিস্মিত হন, খুবই আনন্দিত হন সেই সাথে সোহাগের প্রতিভা বিকাশে সোহাগের শিক্ষা কার্যক্রমে যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে
তার তরফ থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button